রুবি রায়,
তের বছর পর পা রাখলাম এ নগরীতে।
চেনা শহরটা পালটে গেছে বেশ।
টমটম গুলোর জায়গায় এসেছে তিন চাকার রিক্সা।
চায়ের দোকানে উঠেছে রেডিও,
নতুন কয়েকটা দালানও হয়েছে।
শুধু পালটায়নি রয়েল গাছটা,
আজও দেখলাম গাছটা ভরে হলদে রয়েল ধরে আছে।
মনে পড়ে কী তোমার, কলেজে যাবার পথে কত ঢিল ছুঁড়েছি এ গাছে?
মণি ঠাম্মা কত বকে ছিল যেদিন একটা ঢিল পড়েছিল তার রোদে দেয়া আচারের হাঁড়িতে।
যাক সে কথা, তুমি এখন কেমন আছো? অনিমেষ চিঠিতে বলেছিলো জিৎ দার সাথে বিয়ে
করে বেশ সুখেই আছো। আমি জানি আপাদমস্তক সোনায় মোড়ানো তুমি কতটা সুখে থাকতে
পারবে।
এদেশ ছেড়ে যাবার পর কি যে দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটিয়েছি
দিনের পর দিন, কত রাত কেটেছে কেঁদে কেঁদে, কতবার খালি হয়েছিল পানশালার
বোতল, কতবার...... যাকগে সেসব কথা, এসবই অজানা তোমার।
তোমাকে ভুলতে যেয়ে অন্য কোন নারীতে আসক্ত হবার চেষ্টা যে করিনি তা কিন্তু নয়।
পরের বছরেই সাত পাঁকে বেঁধেছিলাম বাবার বন্ধুর মেয়ে সীতা চ্যাটার্জিকে।
বড়ই অভাগী মেয়ে।
ভালবাসবার প্রচন্ড ক্ষমতা ওর, কিন্তু বিনিময়ে আমি সিকিটাও দিতে পারি নি।
দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকার পর যেদিন আমরা অশুদ্ধ হলাম, সেদিন ছিল ওর
বিজয়ের দিন। জগৎ জয় করা ওর উচ্ছ্বাস দেখে বড্ড মায়া লেগেছিল তখন।
বিজয়ের সেই রাতে ও দেখেনি সেদিন ওর হাতে ধর্ষিত হয়েছিলো রক্তমাংসে গড়া একটা অবয়ব।
অনেক বাজে বকছি, ক্ষমা করবে রুবি।
ভাবছো আজ এত বছর পর কেন লিখছি তোমায়? বলছি...।
আজ এতকাল পর তোমাদের পুরনো বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। বাড়িটা আগের মত
থাকলেও পালটেছে প্রধান ফটক এবং ভেতরের বাসিন্দাগুলো। তের বছর আগের
স্মৃতিগুলো মনে হয়ে দৃশ্যগুলো বারবার ঝাপসা লাগছিলো। সেদিন বিদায় নেয়া
সম্ভব হয়নি, আজ বিদায় চাইতে লিখছি, এবারই প্রথম ও শেষবারের মত। আজ এ বিদেয়
চাওয়ার দিনে তোমার চোখের কোণে একটু জল জমা হলে, বেখেয়ালে বিদায়ের জন্য হাত
নাড়লে আমার এ শাপের জীবন মুক্তি পাবে।
পত্র হাতে যখন তুমি পড়ছো, তখন আমি আবার বিলেতের পথে, কে জানে হয়তোবা হুইস্কি হাতে জানালার বাইরের তুষার বৃষ্টি দেখছি।
আমি কেমন আছি জানতে কি ইচ্ছে হয়?
জন্মালে বেঁচে থাকতে হয়, তাই বেঁচে আছি।
তুমি সুখে থেকো।
ইতি,
সমরেশ
বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।