অথচ মুক্তির জন্য তোমার কত হাহাকার ছিলো,
ডান্ডা বেড়ি ভাঙ্গার আকুতি ছিলো শত।
জং ধরে ধরে অকালে ক্ষয়ে গেলো কত সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত।
শিকল ভাঙ্গার মিছিল থেকে একে একে ফিরে গেলো কত তান্ত্রিক, কত মাহুত, কত কামার।
অতঃপর এলেন কবি।
ঝোলানো ব্যাগ থেকে বের করলেন শাণিত করাত,
ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে আবৃত্তি করলেন মুক্তির কবিতা।
কবিতায় মগ্ন হয়ে তোমার রুগ্ন আত্মা পেল আলীর বল।
প্রলয়ঙ্করী চিৎকারে শিকল ভাঙ্গা তুমি ছুটছো অশ্বপৃষ্ঠে চরে,
স্বাধীন নগরীর পথ ধরে।
বালুঝড়ে ঝাপসা হচ্ছে কবির বিদায় চাহনি ক্রমশ।
পেছনে মরে রইলো শুধু ভাঙ্গা শিকল, অসহায় কবি আর নশ্বর কবিতা।

বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তবুও রেখো আমাকে, মোনাজাতের একাংশে।
ঠাঁই নাইবা হোক কবিতায়, থাকি যেন সারাংশে।


বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি।

চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও …
বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও!
আজো তো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি,
আসবেন অচেনা রাজার লোক
তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌঁছে দেবে ….
এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল! …
করুণা করে হলেও চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি
দিও খামে
কিছুই লেখার নেই তবু লিখো একটি পাখির শিস
একটি ফুলের ছোট নাম,
টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু, হয়তো পাওনি খুঁজে
সেইসব চুপচাপ কোন দুপুরবেলার গল্প
খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড় একা লাগে, তাই লিখো
করুণা করে হলেও চিঠি দিও, মিথ্যা করে হলেও বোলো, ভালবাসি !


বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রুবি রায়,
তের বছর পর পা রাখলাম এ নগরীতে।
চেনা শহরটা পালটে গেছে বেশ।
টমটম গুলোর জায়গায় এসেছে তিন চাকার রিক্সা।
চায়ের দোকানে উঠেছে রেডিও,
নতুন কয়েকটা দালানও হয়েছে।
শুধু পালটায়নি রয়েল গাছটা,
আজও দেখলাম গাছটা ভরে হলদে রয়েল ধরে আছে।
মনে পড়ে কী তোমার, কলেজে যাবার পথে কত ঢিল ছুঁড়েছি এ গাছে?
মণি ঠাম্মা কত বকে ছিল যেদিন একটা ঢিল পড়েছিল তার রোদে দেয়া আচারের হাঁড়িতে।
যাক সে কথা, তুমি এখন কেমন আছো? অনিমেষ চিঠিতে বলেছিলো জিৎ দার সাথে বিয়ে করে বেশ সুখেই আছো। আমি জানি আপাদমস্তক সোনায় মোড়ানো তুমি কতটা সুখে থাকতে পারবে।
এদেশ ছেড়ে যাবার পর কি যে দুঃসহ যন্ত্রণায় কাটিয়েছি দিনের পর দিন, কত রাত কেটেছে কেঁদে কেঁদে, কতবার খালি হয়েছিল পানশালার বোতল, কতবার...... যাকগে সেসব কথা, এসবই অজানা তোমার।
তোমাকে ভুলতে যেয়ে অন্য কোন নারীতে আসক্ত হবার চেষ্টা যে করিনি তা কিন্তু নয়।
পরের বছরেই সাত পাঁকে বেঁধেছিলাম বাবার বন্ধুর মেয়ে সীতা চ্যাটার্জিকে।
বড়ই অভাগী মেয়ে।
ভালবাসবার প্রচন্ড ক্ষমতা ওর, কিন্তু বিনিময়ে আমি সিকিটাও দিতে পারি নি।
দিনের পর দিন উপেক্ষিত থাকার পর যেদিন আমরা অশুদ্ধ হলাম, সেদিন ছিল ওর বিজয়ের দিন। জগৎ জয় করা ওর উচ্ছ্বাস দেখে বড্ড মায়া লেগেছিল তখন।
বিজয়ের সেই রাতে ও দেখেনি সেদিন ওর হাতে ধর্ষিত হয়েছিলো রক্তমাংসে গড়া একটা অবয়ব।
অনেক বাজে বকছি, ক্ষমা করবে রুবি।
ভাবছো আজ এত বছর পর কেন লিখছি তোমায়? বলছি...।
আজ এতকাল পর তোমাদের পুরনো বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। বাড়িটা আগের মত থাকলেও পালটেছে প্রধান ফটক এবং ভেতরের বাসিন্দাগুলো। তের বছর আগের স্মৃতিগুলো মনে হয়ে দৃশ্যগুলো বারবার ঝাপসা লাগছিলো। সেদিন বিদায় নেয়া সম্ভব হয়নি, আজ বিদায় চাইতে লিখছি, এবারই প্রথম ও শেষবারের মত।  আজ এ বিদেয় চাওয়ার দিনে তোমার চোখের কোণে একটু জল জমা হলে, বেখেয়ালে বিদায়ের জন্য হাত নাড়লে আমার এ শাপের জীবন মুক্তি পাবে।
পত্র হাতে যখন তুমি পড়ছো, তখন আমি আবার বিলেতের পথে, কে জানে হয়তোবা হুইস্কি হাতে জানালার বাইরের তুষার বৃষ্টি দেখছি।
আমি কেমন আছি জানতে কি ইচ্ছে হয়?
জন্মালে বেঁচে থাকতে হয়, তাই বেঁচে আছি।
তুমি সুখে থেকো।

ইতি,
সমরেশ



বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কেউ কথা রাখেনি, তেইশটি বছর ফুরিয়ে এলো, কেউ কথা রাখেনি।
ছেলেবেলায় এক বন্ধু তার খালি টিফিন বক্স দেখিয়ে ধার নিয়ে বলেছিল-
"ছুটির পর আম্মুর থেকে টাকা নিয়ে দিয়ে যাবো"
তারপর কত দিন ছুটি হলো, কিন্তু সেই বন্ধু টাকাটা
আর দিলোনা
তেইশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।

মামা বাড়ির দাঁড়োয়ান নাদের আলী বলেছিল, তিন টাকা ধার দাও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি দ্বি-প্রহরেই শোধ করে দেবো
যখন মনিব গাড়ি বের করবে!
নাদের আলী, আমি আর কত অপেক্ষা করবো? মামা গাড়ি বের করে বিশ্ব ভ্রমণ করে আসলে তারপর তুমি আমার ধার শোধ করবে?
এক টাকার আচার কিনতে পারিনি কখনো
মিমি চকলেট আর আমসত্ত্ব দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে চড়ুইভাতি
ছোট ছোট মাটির চুলোয় লাকড়ি দিয়ে ভাত-সালুন রেঁধেছে বালিকারা
কত রকম ভর্তা বানিয়েছিল
আমাকে তারা একটুও ডাকেনি!
বান্ধবি আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিল, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বান্ধবী এখন প্রবাসী, আমাদের খেলা হয়নি
সেই চড়ুইভাতি, সেই মিমি-আমসত্ত্ব, সেই ভর্তা-সালুন
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
পত্রিকায় চাইনিজ মুঠোফোন দেখিয়ে ফাতেমা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার জন্যেও বড় ডিসপ্লের মোবাইল আনবে।
ভালোবাসার জন্য আমি কোচিংয়ের বেতন মেরেছি
বাবার পকেট থেকে সরিয়েছিলাম পাঁচশো টাকার দুটি নোট
গুলিস্তান মার্কেট তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছিলাম বড় ডিসপ্লের নোকলা ফোন
তবু কথা রাখেনি ফাতেমা, এখন তার হাতে থাকে শুধুই আইফোন।
এখন সে যে-বড়লোকের স্ত্রী।
কেউ কথা রাখেনি, তেইশটি বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!
মূল কবিতা: কেউ কথা রাখেনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পাড়ার বখাটে হলেও বিশেষ সুবিধে ছিলো,
অ্যাঁ-জ্বী-আজ্ঞে ছাড়াই প্রেমপত্র ধরিয়ে দেয়া যেত তোমার যাত্রাপথে।
গাইতে জানলে গিটারের তারে
কাঁপুনি দিয়ে সুর বাঁধা যেত,
কবি হলে লিখা যেত দেড় পৃষ্ঠার কবিতা,
আর লেখক হলে ছ'পাতার গল্প।
আমি না পারলাম বখাটে হতে,
না গায়ক, না লেখক।
কবি হয়ে দু লাইন লিখবার যোগ্যতাও হল না।
তুমি তবে অন্য কারো প্রেমিকাই হও, এটাই ভাল।
আমি না হয় লাল চোখটায় একটু জল দিয়ে আসি।
আমার আবার জাত রক্ষা করে চলতে হবে,
বসত গড়তে হবে ভদ্রলোকেদের মাঝখানে।
আমাকে সাঁঝেরবাতি জ্বালবার আগেই
ভদ্রপল্লিতে পৌঁছুতে হয়।
পাছে ভয় হয়, লিস্টি থেকে যদি নামটা কাঁটা যায়!


হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।




বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
একজীবনেই বুঝতে যদি
তুমি কত দরকারি,
তুমি ছাড়া আমি মানে
লবণ ছাড়া তরকারী।


বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পরের পাতাOlder Posts Home