ছোট লোকের দিকে ফিরে তাকাতে নেই।

কাঠ ফাঁটা রোদ, গরম আর জ্যাম। এই তিনে মিলে জীবনটা কত দুর্বিষহ করে তুলতে পারে তা হারে হারে টের পাচ্ছে শাহেদ। ফ্রুটোর বোতলটা মুখে লাগিয়ে এক চুমুকেই অর্ধেক শেষ করে দিল। "আমি হেটেই চলে যাচ্ছি, তুমি গাড়ী নিয়ে আসতে থাকো" ড্রাইভারকে কথা গুলো বলেই বসুন্ধরা সিটির উদ্দ্যেশে হাটা শুরু করলো শাহেদ।অল্প কিছু হাঁটার পর এক ছোট লোকের বাচ্চা এসে হাত পেতে চেঁচাতে শুরু করলো "স্যার, ১০টা টাকা দেন, দেন না স্যার!১০টা টাকা দেন দুপুরে কিসুই খাই নাই, চাইরটা ভাত খামু স্যা........"

কথা শেষ করতে পারলো না বাচ্চু, তার আগেই এক ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিল শাহেদ, ইচ্ছে করছিল কষে একটি লাথি বসিয়ে দিতে, কিন্তু পারলো না। রোজার মাসে এই কাজটা করা মোটেও উচিত হবে না। আবারো হাটা ধরলো বসুন্ধরার উদ্দেশে। পিছনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বাচ্চু, তার দিকে একবারো শাহেদ ফিরে তাকায় না, এইসব ছোট লোকের দিকে ফিরে তাকাতে নেই।

একবুক হতাশা নিয়ে বস্তির উদ্দেশে হাটা শুরু করলো বাচ্চু। পড়ে যেয়ে কনুইয়ের এখানটায় ভালই ব্যাথা পেয়েছে, কিন্তু তার সকল ব্যাথা উবে যায় রাস্তার পাশে হোটেলে ডিম ভাজার গন্ধে। খানিককাল মোহে হাড়িয়ে যায়, ভাবে কি অমৃত গন্ধ। তার দৃষ্টি আটকে থাকে শুধু ডিমকে ঘিরেই।

এমন একটি অসাধারণ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করতে ভুল করেনা মুহিত। শখের বশে ফটোগ্রাফি করা মুহিতের। তাছাড়া তার ফেসবুকে বেশ ভাল একটি জনপ্রিয় পেজও রয়েছে। আজ বের হয়েছিল রোজার মাসের যানজটের কিছু ছবি তুলবে বলে কিন্তু এমন অসাধারণ একটি ছবি পাবে তা আশা করেনি। আসলেই, ফটোগ্রাফি করতে ভাগ্য সহায় থাকা লাগে। মনে মনে বাচ্চুকে ধন্যবাদ দিতে যেয়েও দেয়না, বাচ্চুদের মনে মনেও ধন্যবাদ দিতে নেই, তাহলে নিজের কাছে নিজের মান থাকে না।

রাতে মুহিত ফেসবুকে তার পেজে বাচ্চুর ছবিটা আপলোড করে। ক্যাপশন দেয়- "এর কাছে বার্গার বা পিজার মুল্য কি? অসাধারণ এই ছবিটার জন্য কতটা লাইক?"

সেদিন মুহিতের লাইকের অভাব হয় না, লাইক দেয় শাহেদও। অনেকে আবার এদের জন্য কিছু করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। সেই সব উদ্যোগ কখনো বাস্তবায়ন হয়না।

শাহেদ যখন লাইক দিচ্ছে তখনো হয়তো কোন বাচ্চু চোখ মুচ্ছে, হাত পাচ্ছে আবারো কোন শাহেদের কাছে, রাতের চাইরটা ভাত খাবে বলে.................................
পিছনের পাতাNewer Post পরের পাতাOlder Post Home