***মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে***

- আরে! মাহিন ভাই আপনি?
- তুলি রবিনকে একটু ডেকে দাওতো।
-আপনি ভিতরে বসেন, ভাইয়া একটু দোকানে গিয়েছে। এখনি এসে পড়বে।
মাহিনকে বসিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল তুলি। প্রচণ্ড গরমেও ফ্যান বন্ধ। মাহিনের দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ফ্যানের সুইচ দিয়ে দেখে কারেন্ট নেই। আজকাল কখন কারেন্ট আসে আর কখন যায় তা বলা মুশকিল। চেয়ারের পাশে বুক শেলফে রাখা তুলির ছবিটার দিকে চোখ পড়লো মাহিনের। এই মেয়েটিকে খুব পছন্দ তার। কল্পনায় পার্কে, রেস্তোরাঁয়, কফিশপে ঘুরে বেড়ায় তুলিকে নিয়ে। স্বপ্ন দেখে ঘর বাঁধবার। ইচ্ছে জাগে রাতভর গল্প করে কাটিয়ে দিতে, জোছনার আলোয় ছাঁদে তুলির কোলে মাথা রেখে গা এলিয়ে দিতে।
-কখন এলি তুই?
কল্পনা থেকে ফিরে আসে মাহিন। রবিন তার খুব কাছের একজন বন্ধু। একটি মেয়ের জন্য মাহিন চায় না তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। তাই তার মনের কথাগুলো বলতে পারে না তুলিকে।
-এইতো পাঁচ মিনিট। তোকে এতো ট্রাই করছি কিন্তু নাম্বার বন্ধ কেন?
-আর বলিস না,মোবাইলটায় কি যেন এক সমস্যা হয়েছে। রাত থেকেই মোবাইল বন্ধ।

নতুন একটা সেট কিনার কথা বলতে যেয়েও থেমে যায়। কারন মাহিন জানে রবিনদের আর্থিক অবস্থা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রবিন। বাবা অসুস্থ। সমস্ত পরিবারের দায় ভার তার কাঁধে।
হরেক রকমের সার্টিফিকেট বোঝাই ফাইল নিয়ে বের হয় দুই বন্ধু। পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে দুইজন। রবিনের হাতে জ্বলছে ১ টাকা দামের কড়া গন্ধের সিগারেট।
হটাৎ নিরবতা ভেঙ্গে বলতে শুরু করে রবিন-
-ইচ্ছে করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই। সংসার মায়া ছেড়ে চলে যাই বহু দূরে, যেখানে থাকবে না কোন দায়িত্ব। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া অভিশাপ। এই পরিবারকে সমাজ বাঁচতেও দেয়না মরতেও দেয়না। নিঝুমের পরশু হলুদ, অনেক ভালবাসি মেয়েটাকে কিন্তু কর্তব্যের গণ্ডি থেকে বের হয়ে ওকে গ্রহন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোকে আসলে মিথ্যা কথা বলেছি। তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে, গতকাল বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন লাইন কেটে দিয়ে গিয়েছে। কাল থেকেই বাসায় বিদ্যুৎ নেই। আমার হাতে টাকা পয়সাও তেমন নেই। আজ ছয়শো টাকায় সেটটা বিক্রি করে দিয়েছি, আরো দুই হাজার তিনশো টাকার প্রয়োজন ছিল। সকাল থেকে ঘুরে ঘুরেও কারো কাছ থেকে যখন কোন ধার পেলাম না তখন আর রাস্তা না পেয়ে মার স্বর্ণের চেইনটাও.........
গলা দিয়ে আর কথা বের হয়না রবিনের। অসমাপ্ত কথা গুলো জল হয়ে গড়িয়ে পড়ছে চোখ বেয়ে।
রবিনের লাল নীল স্বপ্ন গুলো অনেক আগেই ছুঁড়ে ফেলেছে ডাস্টবিনে। ভালোবাসা রবিনদের জন্য বিলাসিতা। মা ছাড়া বোনটার বিয়ে দিতে পারলেই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত হোঁচট খাওয়া এই মেধাবী চোখে জল নিয়েই হাটা শুরু করে নতুন কোন চাকরির খোঁজে।
পিছু ডাক দিতে যেয়েও থেমে যায় মাহিন। রবিনদের পিছু ডাক দিয়ে লাভ নেই। এদের অনেক চড়াই উতরাই পার করতে হয়, জীবন সংগ্রামের বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয় একাকী। জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে সফলতাকে একদিন ঠিকই বন্দী করতে পারে রবিনরা কিন্তু ততদিনে এদের সাধ-আহ্লাদ বাতাসে মিশে হারিয়ে যায় কালের অতল গহ্বরে।
পিছনের পাতাNewer Post পরের পাতাOlder Post Home