-কই আবার ঘুমাই
-ঘুমাই মানে কি? তুমি আজকেও আমার সাথে এমন করবা? আচ্ছা
সত্যি করে বলতো তুমি আসলে কি চাও? প্রতিদিন এভাবে আমাকে আশা দাও, কিন্তু কখনই তুমি
আসো না। তোমাকে আর কখনো বলবো না, আর কখনই কোনদিনও অনুরোধ করবো না।
ওর রাগ যে চরম পর্যায়ে তা শুয়ে শুয়েই বুঝতে পারছিলাম।
ক্ষণিকের জন্য চিন্তা করছিলাম এতটা রাগলে ওকে কেমন দেখাবে? এতটা রাগতে কখনই দেখিনি
ওকে। নিশ্চয়ই ও দর দর করে ঘামবে, নাকি রেগে গেলে ওর আপেলের মতো গাল দুটো লালে
টুকটুক করবে?
কল্পনা ছেড়ে ওকে আশ্বাস দিলাম।
-আচ্ছা আচ্ছা আসছি। আর কখনই তোমাকে আশা দিবো না আর
আশাহতও করবো না। তুমি কাজী অফিসের বাহিরেই অপেক্ষা করো আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই
আসছি।
লাইন কেটে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম। আমি জানি ও এখনো
অভিমান করে বসে থাকবে, রাগ দেখাবে। রেগে আমার পিঠে আস্তে করে
ঘুষি দিবে আবার পরক্ষনেই হাসবে বিজয়ীনির হাসি। কিছু কিছু সময় কিছু কিছু
আঘাত মনকে আলোড়িত করে, কিছু কিছু হাসি ওলট পালট করে দেয় সারা দুনিয়া। এমন একটি
ঘুষি খেতেই যাচ্ছি, এমন একটি হাসি দেখার জন্যই যাচ্ছি।
ওর সাথে আমার পরিচয়টা খুব সাদামাটা ভাবেই। সেকেন্ড
ইয়ারের ইম্প্রুভ পরিক্ষার জন্য যখন হন্যে হয়ে পড়ছি তখনই স্যার অন্য ব্যাচের ৩ জন
মেয়েকে আমাদের ব্যাচে নিয়ে আসে। নতুন মেয়েদের দেখে আমাদের ব্যাচের সবার পড়ার গতি
বুলেটের গতিকেও ছাড়িয়ে যেতে লাগলো। এরপর শুরু হল এক্সট্রা টাইম গ্রুপ স্টাডি।
এভাবেই ওর সাথে সখ্যতা, বন্ধুত্ব এরপর ......।
আমি কাজী অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছি, অপেক্ষায় আছি ওর।
এতক্ষণে ওর এসে পরার কথা। নাকি ভেবে নিয়েছে আমি আজও আসবো না, কে জানে।
একটু পরেই ও এসে পড়লো।
খোলা চুল, কপালে লাল টিপ। ঠোঁটে আটকে রাখা চাপা হাসি। ওর মনে যে আনন্দের
বন্যা বয়ে যাচ্ছে তা ওর ওই ঠোঁট দেখলেই বলে দেয়া যায়।
-চলো তাহলে যাওয়া যাক।
-হুম্মম! চলো।
এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষন।
ও আর আমি পাশাপাশি বসে। রুমটাতে আমরা ছাড়াও আরো কয়েকজন
লোক রয়েছে। তাদের কাউকেই চিনি না।
টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে ওকে প্রশ্ন করা হল
-ছবি এনেছেন?
-জ্বী
-ভোটার আই ডি?
-জ্বী এনেছি।
-আপনার মা কি আসবেন?
-না। উনি আসবেন না। উনি অসুস্থ।
-ও আচ্ছা।
এরপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো
-আপনি এনেছেন?
- জ্বী জ্বী, এনেছি।
এরপর শুরু হল সকল আনুষ্ঠানিকতা। অনেক্ষন ধরে বসে আছি।
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে। উত্তেজনা কোন ভাবেই চাপিয়ে রাখতে পারছে না মেয়েটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আমি অভিভূত হয়ে
ওর দিকে তাকিয়ে আছি, ভালই লাগছে তাকিয়ে থাকতে। এমন উত্তেজনা প্রথমবারের মতো ওর
চোখে মুখে।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কানের কাছে এসে বলল
-কি দেখ তুমি?
-তোমার উত্তেজনা।
-ধুর! তুমি একটা ফালতু।
আমি মৃদু হাসি
একটা কাশির শব্দে দুইজনই সামনে ফিরে তাকাই।
-আপনাদের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। আপনারা দুই জন এখানে
সাইন করুন।
প্রথমে ও সাইন করে, এরপর ওর হাত থেকে কলমটি নিয়ে আমি
সাইন করি।
সাইন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো
-অভিনন্দন! আমাদের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এখন থেকে যেকোনো
দিনের যেকোনো সময় যেখান থেকে খুশি আপনার টাকা জমা দিতে এবং উঠাতে পারবেন। আপনার
চেকবই এবং কার্ড তৈরি হওয়া মাত্রই আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এই ছিল আমার জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে ব্যাংক একাউন্ট খুলে
দেয়ার অভিজ্ঞতা। :P
বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।