হবু প্রেমকাহিনীর অপমৃত্যু

কলেজ পরবর্তী সময়টা ছিল ক্রাশ খাওয়ার উপযুক্ত সময়। সেই সময় যখনই কোন মেয়ে দুই দিন মনের দুঃখ বলতো তখনই তার উপর সহানুভূতি থেকে এক ধরনের ভাল লাগা সৃষ্টি হয়ে যেত। তবে এই টাইপের কেইসে একটা সমস্যা থাকে। এরা দুঃখ বলতে এসে দুঃখ বলে, কিন্তু নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার পর আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়।

এতদিন পরে তেমনই একজন গতকাল ফোন দিলো। সে আমার ফেসবুকে ফ্রেন্ড থাকলেও তেমন কথা হয় না বললেই চলে, ফোনে তো আরো আগে কথা হয় না। তাই তার ফোন পেয়ে আমি খুশিতে গদগদ করছি। চায়ের দোকানের এক কোণায় গুটিসুটি হয়ে বসে কথা বলছি। অনেক দিন পর কথা হচ্ছে। কিন্তু ইতস্ততা কাটিয়ে কুশল বিনিময় করতে করতে পাঁচ মিনিটেই ওর ব্যালেন্স শেষ। আমিও কল ব্যাক করে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম। কিন্তু কপাল খারাপ, ২ মিনিট যেতে না যেতেই আমার ব্যালেন্সও শেষ। তখন আবিষ্কার করলাম বালিকার নাম্বার গ্রামীন। তাই আমার যথেষ্ট এয়ারটেল টু এয়ারটেল মিনিট থাকলেও, মোবাইল ব্যালেন্স গ্রামীনের রাক্ষসী কামড় সহ্য করার মতো পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবান ছিল না। ইজ্জতের এমন ফালুদা টাইপ অবস্থায় প্রবল পরিমাণে হতাশ হয়ে গেলাম। হতাশার আরো বড় কারণ হচ্ছে পকেটে আছে ৭ টাকা মাত্র। তাই রিচার্জের চিন্তা মাথায় আনার প্রশ্নই আসে না।

মোবাইলে টুংটাং শব্দে একটা ম্যাসেজ আসলো। বালিকা মেসেজে লিখেছে, "তারতারি ভাইবারে আসো, কথা বলি।"

মনে মনে বালিকার বুদ্ধির প্রশংসা করতে করতে ভাইবার অন করলাম। ভাইবার অন করার পরে উপলব্ধি হলো আমার মোবাইলে ব্যালেন্স আর মেগাবাইট দুইটার কোনটাই নাই।

দোকানে আধা খাওয়া চায়ের কাপ রেখেই দিলাম বাসার উদ্দেশ্যে ভোঁ দৌড়। এই দুর্দিনে একমাত্র আমার পিসির ভাইবারই আমাকে উদ্ধার করতে পারে। দ্রুত বাসায় এসে পিসি অন করার পর দেখি পিসি অন হচ্ছে না। শুধু উইন্ডোজের লোগো আসছে আর নিচে লিখা, "Scanning and repairing drive (C:) 1% complete "

মহামূল্যবান এই সময়ে ড্রাইভ রিপেয়ার করার কোন মানেই হয় না। স্কিপ করার কোন অপশন খুঁজে না পেয়ে কয়েকবার পিসি রিস্টার্ট দিয়ে দেখলাম একই অবস্থা। ওইদিকে বালিকার অপেক্ষার কথা চিন্তা করে করে আমার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে। বুকে কষ্টটা মারাত্মক পীড়া দিচ্ছিলো। যন্ত্রণাটা অনেকটা, প্রবল বাথরুমের চাপ নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে বাথরুমের ঢোকার পর কলে পানি না থাকলে যেই কষ্টটা পাওয়া যায়, আমারো তেমনই মনে হচ্ছিলো। ।

যাই হোক, আশার কথা হলো ১৫-২০ সেকেন্ডের ভিতরেই রিপেয়ারিং ৮% কমপ্লিট হয়ে গেল। সেই হিসেবে ২/৩ মিনিটের ভিতর রিপেয়ারিং কমপ্লিট হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এতো সুখতো আর আমার কপালে নাই। এই ৮% থেকে ৯% হতে সময় নিলো প্রায় ৩০ মিনিট, আর ১০০% রিপেয়ার হতে মোটামুটি এক ঘন্টার মতো লাগলো। ওপেন হবার সাথে সাথে ভাইবারে ঢুকে দেখি ততক্ষণে বালিকা অফলাইনে। লাস্ট অনলাইন ছিল ১৩ মিনিট আগে।

মনে অনেক কষ্ট আর হতাশা নিয়ে দুঃখের গান খোঁজা শুরু করে দিলাম। অবশেষে সময়োপযোগী একটা গান পেলাম-

"বাচপান কী মোহাব্বত কো, দিলসে যুদা না কার না।

মেরি ইয়াদ যাব আয়েগি, মিল নে কি দুয়া কার না।"

এভাবেই আমার একটি হবু প্রেমকাহিনীর শুরু হবার আগেই অপমৃত্যু ঘটে গেলো।

সংযুক্তি: বালিকাকে ফেসবুকে মেসেজ দেই, বালিকা মেসেজ সিন করে কিন্তু রিপ্লাই দেয় না।




বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি ব্যতিত এই পোস্ট কপি পেস্ট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পিছনের পাতাNewer Post পরের পাতাOlder Post Home